যুক্তি বা সত্য কে লুকিয়ে কাউকে ছোট বা হেয় করতে চাইলে আজকাল হুট্ করে অভিযোগের সুরে বলা হয়, ‘১৫ বছর কোথায় ছিলেন?’ আর তার সাথে আরেকটু রং মিশিয়ে যে কারো ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক অর্জনের উপর কয়েক চিমটি দুর্নীতির গুজব ছিটিয়ে দিলেই হয়ে যায় দারুন ভাইরাল একটা কনটেন্ট, নিউজ বা ভিডিও ।
আমার জন্যে প্রশ্নটা ১৫ বছর হবে না বরং হবে গত ২৭ বছর আমি কোথায় ছিলাম কি করেছি ?
আমার উত্তরটা খুব সোজাসাপ্টা ; ১৯৯৮ সালে ব্যবসা শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রযুক্তি খাতের মতো স্পর্শকাতর একটি সেক্টরে দুই হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, বিশ্বের ৮৪টিরও বেশি গ্লোবালি রেস্পেক্টেড প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের পণ্য এবং সেবা বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্যে সহজে ব্যবহার করার কাজে ব্যস্ত থেকেছি,আর আমার প্রিয় রামগঞ্জের মানুষের পাশে সাধ্যমত থাকার চেষ্টা করেছি।
আরো সহজ করে বুলেট পয়েন্ট দিয়ে বলি :
-আমরা কোম্পানির ২০০০ প্লাস কর্মীর মধ্যে ৩০০ জনই রামগঞ্জের মানুষ।
-১০০ জন নারী আমাদের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।
-বিদেশ থেকে নিয়মিত দক্ষ প্রশিক্ষক এনে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
-হেলথ ইন্সুরেন্সের মাধ্যমে কর্মীদের সবার বিপদ আপদে পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা।
বিনয়ের সাথে বলতে চাই ,ফেসবুকে কোন কিছু লিখে পাঁচ/দশটা লাইক অর্জন করা যতটা সহজ, একটা মানুষের কর্মসংস্থান করে দিতে পারা সম্ভবত তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। অবশ্যই যারা ফেসবুকে লেখালেখি করেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু এই মিস ইনফর্মেশন-এর যুগে হুট করে কোন কিছু যাচাই-বাছাই না করে কিছু লিখে দেয়ার প্রবণতা খেয়াল করছি সেই জন্যই কিছু কথা বলা। দুর্নীতি নিয়ে যে লেখাগুলো প্রায়ই দেখতে পাই,স্পেশালি আমাকে নিয়ে অথবা স্মার্ট টেকনোলজিস নিয়ে, সেখানে একটা কথাই বলতে চাই, যে ৮৪টি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের সাথে আমি বা আমার প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছি, তাঁদের সাথে ব্যবসা করার প্রথম শর্তই হলো নৈতিকতা, সততা এবং পারফেক্ট গ্লোবালী এক্সেপ্টেড বিজনেস এথিক এবং রেকর্ডস।
বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি কাজের বিষয়ে কিছু স্ক্রিনশট নির্ভর ভাইরাল পোস্ট নজরে এসেছে ইদানিং , যা নিয়ে আগেও পত্রিকায় আমরা স্পষ্ট ভাবে সব বুঝিয়ে বলেছি। কিন্তু ঐযে বললাম ,আজকাল কারো ব্যবসায়িক অর্জনের উপর দুএকচিমটি দুর্নীতি ছিটিয়ে দিলেই তৈরী হয়ে যায় একটু সেনসেশনাল ভাইরাল পোস্ট, তাই আরেকবার কিছু কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।কাজটি ছিল বিশ্বব্যাংকের মতো সম্মানজনক একটি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে এবং নজিরদারিতে। কাজ শেষে বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকেই তাদের প্রসেস অনুযায়ী যাচাই বাছাই করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে,স্পেশালি বিশ্বব্যাংক যখন আপনাকে বলে “তোমার কাজে আমরা সন্তুষ্ট” তারমানে তাঁরা আদ্যোপান্ত, A-Z সবকিছু যাচাই বাছাই করেই বলেছে।তারপরও দুর্নীতির বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা বা কোন ধরনের অসৎ উপায়ের উপস্থিতি , অযৌক্তিকভাবে কোনকিছুর মূল্য বাড়ানো, এধরনের অভিযোগ দুঃখজনক।
অবশ্য আপনি নিজে যদি ব্যবসা পরিচালনা না করে থাকেন বা জাপানিজ বা আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে দশকের পর দশক ধরে পার্টনারশীপ বজায় রাখার অভিজ্ঞতা যদি কারো না থাকে অথবা অন্তত কয়েকশ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি না করে থাকেন, তাহলে আপনার মনে হতেই পারে যে ফেইসবুকে এসব কথা সবাই বলতেই পারে, ঠিক তাই, ফেইসবুকে যা ইচ্ছা লিখে দেয়াই যায়,কারণ এটা হচ্ছে এই যুগের সব চেয়ে সহজ কাজ।
আমার সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে, যৌক্তিক সমালোচনা,এক্সপার্ট ওপিনিয়ন বা কন্সট্রাক্টিভ ক্রিটিসিজম করা এক জিনিস আর শুধুমাত্র চরিত্র হনন করার জন্য কোনকিছু লিখে দেওয়া আরেক জিনিস।
দ্বিতীয়ত, যেহেতু ৯৮' সাল থেকে আমি ব্যবসা করছি আমার প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিখাতে শুধু আমি নয়, বাংলাদেশে যারাই ব্যবসা করছে কাজ করছে তারা প্রত্যেকেই, গত ২০-২৫ বছর যারা ক্ষমতায় এসছেন,সরকার গঠন করেছেন এবং প্রশাসনে ছিলেন তাদের প্রত্যেকের সাথে কোন না কোন ক্যাপাসিটিতে কাজ করতে হয়েছে, এখনো অনেকেই করছেন। কাজ করা, একই ফোরামে থাকা, কোন অনুষ্ঠানে কারো সাথে করমর্দনের ছবি থাকা মানেই যে তার রাজনৈতিক ফিলোসোফিকে একদম বুকে ধারন করে এনডোর্স করছেন বা সমর্থন করেছেন অথবা তারসাথে মিলে আপনি অসৎ কিছু পরিকল্পনা করছেন এরকম অবিবেচক ধারণা থেকে বের হতে না পারলে আমাদের দেশে কখনোই যোগ্য বা ভালো ব্যক্তিরা রাজনীতিতে আসবেন না। একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে আমি যদি বলি গত ২৭ বছরে এতোজনের সাথে ব্যবসা এবং উঠাবসা করেছি যে , চাইলে যেকোন সময়েই হয়তো রাজনীতিতে যোগ দিতে পারতাম । অনায়াস কাজটা কেন এতো সময় পরে এসে করলাম ? কারণ দেশের ৯৫% কর্ম সংস্থান আসে প্রাইভেট সেক্টর থেকে তাই আগে আমি ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে গেছি কয়েকহাজার মানুষের রিজিক নিশ্চিত করার জন্যে ; আর সেজন্যে যা যা করা প্রয়োজন ছিল, আমি সেসব নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করেছি । এখন এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়েছে ব্যবসা করে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করে, বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রযুক্তি সেবা দিয়ে এবং নিজের এলাকায় কাজকর্ম করে আমি যে পর্যায়ে এসেছি, এখন নতুন একটা স্বপ্নের দিকে পা বাড়ানোই যায় । যদি আমার অন্যকোন ধরনের ফিলোসোফি বা রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকতো তাহলে সেটা আমি গত ১৫বছরে একাধিকবার প্রকাশ করতে পারতাম। তখন আমি কেন করিনি! কারণ আমার ফিলোসোফিটা হলো জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এবং সেটা কি ভীষণ প্রতিকূলতা পার করেছে গত ১৫ বছর সেটা আমরা সবাই জানি!
অনেকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছেন, উড়ে এসে জুড়ে বসার-দশা। এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসার কিছু নেই। এলাকার মানুষের সাথে সবসময়ই ছিলাম এবং ইনশাল্লাহ থাকবো। তাছাড়া প্রত্যেকের ক্যারিয়ারের এবং ব্যক্তিগত মনস্তাত্ত্বিক গভীরতার একাধিক স্তর থাকে যে স্তরে আসার পরে সে পরবর্তী ধাপে যেতে চায়।
এই ২০২৫ এ এসে এখন আমার মনে হয়েছে ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতে এসে মানুষের জন্য হয়তো আরো ভালো কিছু করতে পারবো। আর যেহেতু প্রযুক্তিখাতে কাজ করেছি, বাংলাদেশের যে ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি হওয়ার সুযোগের বড় একটা অংশই সেটাই আসবে প্রযুক্তিখাত থেকে।
তাই আশা করছি, আমার পুরো মিশনটাই হচ্ছে আমার রামগঞ্জ ও সারা বাংলাদেশের মানুষকে আরেকটু বেশি সেবা করার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করা।
"সবার আগে দেশ, এক বাংলাদেশ"
No Comment Yet