রমজানে ‘সয়াবিন’ নিয়ে শঙ্কায় ভোক্তারা

শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫ সময়: ০৯:৪১:১২
বিজ্ঞাপন
This is curout pro

This is curout pro

রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে রীতিমতো ‘সয়াবিন তেল’ আতঙ্ক পেয়ে বসেছে ভোক্তাদের। প্রায় দুই মাস ধরে সরবরাহ সংকটে থাকা সয়াবিন তেলের বাজার এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির সরবরাহ কেমন হবে, ঠিকমতো পাওয়া যাবে কি না, পাওয়া গেলেও দাম কেমন হবে—এই প্রশ্নগুলো এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ভোক্তার মনে।


বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, পবিত্র রমজানে এবার চিনি, ছোলা, খেজুর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব পণ্যের আমদানিও হয়েছে পর্যাপ্ত। এমনকি সয়াবিন তেলও চাহিদার তুলনায় বেশি আমদানি হয়েছে। তাহলে কেন এ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে? এদিকে রমজানকে উপলক্ষ্য করে বাজারে মাছ, মুরগি, লেবু, শসা, বেগুনের দাম কিছুটা বেড়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে খোঁজ নিতে গেলে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দরদামের এ চিত্র পাওয়া যায়। বাজারে খুচরা বিক্রেতারা সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, কোম্পানির ডিলাররা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে না। শুধু তা-ই নয়, বোতলজাত সয়াবিনের সঙ্গে নানা পণ্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। সম্প্রতি রাজধানীর চারটি বাজার পর্যবেক্ষণ করেছে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সরকারের সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেই পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এতে খুচরা দোকানগুলোতে তেলের সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া, তেলের সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীদের অন্য পণ্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। ভোক্তাদের প্রশ্ন—তাহলে কেন এখন পর্যন্ত এই সংকট তৈরির পেছনের চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে ঈদের আগের দিন হঠাত্ করেই বাজার থেকে সয়াবিন তেল রীতিমতো উধাও হয়ে যায়। আবার ঈদের পর সয়াবিনের দাম বাড়ানো হলে তা বাজারে ফিরে আসে। তাহলে কি এবারও সিন্ডিকেট সয়াবিনের দাম বাড়ানোর জন্য বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে?

এত সয়াবিন গেল কোথায়?

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত অক্টোবর-জানুয়ারি সময়ে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। কিন্তু তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব নেই বাজারে। সরবরাহ সংকটের কথা বলে দফায় দফায় দাম বাড়ানো হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত শুক্রবার রাজধানীর খুচরাবাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় লিটারে পাঁচ টাকা বেশি। আর দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৫৫ টাকা এবং এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে দুই টাকা বেড়ে ১৭৫ থেকে ১৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই ভোজ্য তেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এখনো সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। সরকারের উচিত হবে, রমজানের আগে ও পুরো রমজান মাস জুড়ে কঠোরভাবে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা। এদিকে সয়াবিনের বাজারের এ পরিস্থিতিতে বাজারে তদারকি বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যসচিব হিসেবে মাহবুবুর রহমান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর গত বুধবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাপ্রধানদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এখন সরকারের অগ্রাধিকার। রমজান মাসে ভোক্তাদের স্বস্তিতে রাখতে যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।’

এদিকে রমজান শুরুর আগে গতকাল বাজারে গরুর মাংস, মুরগি, মাছ, লেবু, শসা ও বেগুনের দাম বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি।

মাংসের পাশাপাশি বাজারে সব ধরনের মাছের দামই কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

দাম বেড়েছে, লেবু, শসা ও বেগুনের। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে যে লেবুর হালি ছিল ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। তা গতকাল ৪০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৬৫ টাকা, হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি।

স্বস্তি এবার খেজুর, ছোলায়

প্রতি বছর রমজানের আগে নিত্যপণ্যের বাজারে যে ‘আগুন ভাব’ থাকে। এবার তা নেই। সয়াবিন তেল ও আরো দুই-একটি পণ্য বাদে খেজুর, চিনি, ছোলাসহ অন্যান্য পণ্যের বাজার এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলা হয়েছে—গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি এই চার মাসে চিনি আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন। আলোচ্য সময়ে ডালজাতীয় পণ্যের আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৭ মেট্রিক টন। ছোলা আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি। উল্লিখিত সময়ে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বেড়ে মটর ডালের আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন। পেঁয়াজ আমদানি ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন। রসুনের আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৬১ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন। আদার আমদানি ৫৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫২ হাজার ৫১৫ মেট্রিক টন। ফলে কোনো পণ্যেরই সংকট নেই। দামও স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল বাজারে একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ক্রেতারা রমজানের শুরুতে বাজারে কেনাকাটা করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন, যে কারণে বাজারে হঠাত্ করে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে দামও বাড়ে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কিনলে রমজানের এক সপ্তাহের মধ্যেই সব পণ্যের দামই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

0%
0%
No Comment Yet